Skip to main content

মানুষের চাঁদ জয়ের গল্পো


আকাশের দিকে তাকিয়ে মানুষ সবসময় ভেবেছে এই পৃথিবীর বাইরে কি আছে। তাই চাঁদ, তারা আর মঙ্গলসহ সব গ্রহগুলো তো বটেই আকাশের বাইরে মহাকাশের সবকিছু নিয়েই মানুষের কৌত‚হল ছিলো সেই আদ্যিকাল থেকেই। বিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষের মহাকাশ ভ্রমণের সেই স্বপ্ন আলোর মুখ দেখলো। আর আজ কেমন দেখতে দেখতে চাঁদে মানুষের পদার্পণের ৪২ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে! আপনারা তো নিশ্চয়ই মানুষের চাঁদ বিজয়ের কাহিনী শু
নতে চান। আজকে তাহলে চলেন সেই কাহিনীই শুনে আসি। আমরা জানি সৌরজগতের সব গ্রহ সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে আর চাঁদ আবার পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। এ কারণেই চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। জ্যোৎস্না রাতে আকাশের দিকে তাকালেই তো আপনি চাঁদ দেখতে পান। তখন তোমার যেমন চাঁদে যেতে ইচ্ছা করে, এখন থেকে ৫০ বছর আগের মানুষেরও ইচ্ছা করেছিলো। তাই সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে ‘স্পুৎনিক ২’ মহাকাশযানের ভেতরে করে প্রথম পৃথিবীর বাইরে একটি কুকুর
পাঠিয়েছিল। ওর নাম ছিল ‘লাইকা’। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের দেশটিকে চিনেছো তো? আরে, এখনকার রাশিয়া। কেনো, মানচিত্রে দেখেননি? এশিয়া আর ইউরোপের উপরের দিকে, যাকে বলে উত্তর দিকে এক বি-শা-ল দেশ! এরপর ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালে সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগরিন এবং ভালেন্তিনা তেরেসকোভা প্রথম মানব ও প্রথম মানবী হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ ভ্রমণ করে আসলে মানুষের চাঁদে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। এরই মধ্যে লুনা-১, লুনা-২ ও লুনা-৩ নামের তিনটি সোভিয়েত নভোযান চাঁদের অন্ধকার অংশের ছবিও তুলতে সক্ষম হয়। ১৯৫০’র শেষ দিকে আমেরিকা তাদের নিজেদের একটি মহাকাশ সংস্থা চালু করে, যার নাম দেওয়া হয় ‘নাসা’। এর লক্ষই ছিলো মহাকাশে মানুষ পাঠানো। কিন্তু সোভিয়েতরা তাদের এক মাস আগেই মহাকাশে মানুষ পাঠিয়ে দিলো। আর যায় কোথায়! ১৯৬১ সালের মে মাসে তখনকার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ২০০০ সালের আগেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দেন। তারপর আমেরিকা পাইওনিয়ার ও রেঞ্জার সিরিজের অনেকগুলো নভোযান চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠায়।
যাদের মধ্যে রেঞ্জার ৭, ৮, ৯ নভোযানগুলো চাঁদের ছবিও পাঠিয়েছিলো। এরই মধ্যে সোভিয়েত লুনার ও আমেরিকার স্রাভেয়র সিরিজের মানববিহীন নভোযান চাঁদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এরপর আমেরিকা তার অ্যাপোলো ৭, ৮, ৯, ১০ এই চারটি মানুষবাহী নভোযান পাঠায়। এগুলোকে চাঁদে মানুষ পাঠানোর একরকম প্রস্তুতিও বলতে পারো। আর অ্যাপোলো ১০ তো চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণও করে আসলো। এরপর আসে অ্যাপোলো ১১-র সেই বিখ্যাত অভিযান। এই অ্যাপোলো ১১’র নভোচারীরাই কিন্তু চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখেছিল। এই অ্যাপোলো ১১ নভোযানের দুটি অংশ ছিল- মূলযান কলম্বিয়া ও চাঁদে নামার জন্য একটি বিশেষ যান ঈগল। আর এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ৩ নভোচারী। এঁরা হলেন- নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র। এই ৩ জনের ছোট্টো দলের দলপতি কে ছিলেন বলো তো? নীল আর্মস্ট্রং। মাইকেল কলিন্স ছিলেন কলম্বিয়ার পাইলট আর এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র পাইলট ছিলেন ঈগলের। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে অ্যাপোলো ১১ উড়াল দিলো চাঁদের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১২ মিনিট পরে এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পৃথিবীর চারপাশে ঘোরাঘুরি করে ঠিক ৩০ মিনিট পরে চাঁদের দিকে যাত্রা শুরু করলো। আর ৩ দিন যাত্রা করার পর ১৯ জুলাই অ্যাপোলো ১১ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করলো। তক্ষুণি কিন্তু ঈগল, মানে যে যানটি চাঁদে যাবে, চন্দ্রযান আরকি, সেটা নিয়ে তাঁরা রওয়ানা দিলেন না। আগে তো সবকিছু ঠিকঠাকমতো দেখে নেয়া চাই নাকি! রীতিমতো ৩০ বার কক্ষপথে আবর্তন করে তবেই
চন্দ্রযান ঈগল মূল নভোযান কলম্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে গেলো। আর ২০ জুলাই চাঁদের শান্তির সাগর নামের জায়গাটিতে অবতরণ করলো ঈগল। চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণ করলো কোনো মানুষ। চাঁদে এঁকে দিলো মানুষের পায়ের ছাপ। চাঁদে প্রথম পা রাখেন কে বলেন তো? কে আবার? নীল আর্মস্ট্রং! আর তারপরে নামেন ঈগলের পাইলট এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র। তারপর তাঁরা চাঁদে হাঁটা- চলা করলেন, ছবি উঠালেন, চাঁদের মাটি সংগ্রহ করলেন, আমেরিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সাথে টেলিফোনে কথাও বললেন। এমন সুযোগ আর ক’জনের ভাগ্যে জোটে বলেন। চাঁদের বাতাসে কিন্তু মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নেই। এমনকি ওখানকার
বায়ুমন্ডল আমাদের জন্য একদমই উপযোগী নয়। তাই তাদেরকে বিশেষ স্পেসস্যুট পরেই চাঁদে নামতে হয়েছিলো। কসমোনটরা, মানে মহাকাশচারীরা যে স্যুট পরে মহাকাশে যায়, চাঁদেও তারা সেই স্যুট পরেই নেমেছিলেন। দেখো না, ওদের ছবিতে ওদের গায়ে সাদা রঙের কী বেঢপ একটা পোশাক! আবার আপনাদের তো ক্ষিদে পেলেই খেতে পারো, ইচ্ছা করলেই দৌড়োতে পারো, চাইলেই বন্ধুদের সাথে খেলতেও পারো, মানে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। মহাকাশে কিন্তু এতো সহজে সবকিছু করতে পারবে না। কারণ সেখানে তোমার কোনো ওজন নেই! তুমি যখন হেঁটে চলো কিংবা দৌড়াও, তখন পৃথিবী তোমাকে আকর্ষণ করে। তাই তোমার পা মাটিতেই থাকে। কিন্তু মহাকাশে তোমাকে কেউ-ই আকর্ষণ করবে না। তাই তুমি বাতাসে ভেসে বেড়াবে! ভাবছো, খুব
বুঝি মজা, ইচ্ছে মতো ভেসে বেড়ানো যাবে। কিন্তু মুশকিল কি জানো, তোমাকে কেউ টানছে না মানে তোমার কোনো অবলম্বনও নেই
যাকে ধরে তুমি চলাফেরা করবে। ওখানে এতোটুকু আগাতেই যে কী কষ্ট করতে হয়!
আর তাই মহাকাশচারীদেরকে আলাদা করে মহাশূন্যে চলাফেরা
করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণই নিতে হয়। চাঁদের অবশ্য আকর্ষণ শক্তি আছে। তবে তা পৃথিবীর তুলনায় নেহায়েতই কম। পৃথিবীর মাত্র ৬ ভাগের ১ ভাগ। আর তাই সেখানে মানুষের ওজনও পৃথিবীর ওজনের চাইতে অনেক কম, ঐ ৬ ভাগের ১ ভাগ। আর তাই ওদেরকে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হয়েছিলো।
আর আগেই তো বলেছি, চাঁদের বাতাস মানুষের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। তাই সেখানে কোনো শব্দই শোনা যায় না। এই কারণে আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিনকে একে অপরের সাথে কথা বলতে হয়েছিল রেডিওর মাধ্যমে। তারচেয়েও মজার কথা কি জানেন? তাদের চাঁদে অভিযানের দৃশ্য কিন্তু সারা পৃথিবীতে সরাসরি সম্প্রচারিতও হয়েছিল। সেই ভিডিও ক্লিপসগুলো এখনো আছে। আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিন প্রায় ২১ ঘন্টা চাঁদে ঘুরেছিলেন। তবে তারা সেখানে গিয়ে কেবল খেয়াল- খুশিমতো শুধু ঘোরাঘুরিই করেননি, বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করেছিলেন। আর সবশেষে আমেরিকার জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন চাঁদের বুকে। তবেই দেখো, আমাদের দেশের কেউ যদি যেতো, তবে চাঁদের বুকে আমাদের একটা লাল-সবুজ পতাকাও কী সুন্দর করে পতপত করে উড়তো! তোমাদের মধ্যে কেউ না কেউ কিন্তু অবশ্যই মহাকাশে যাবে। মহাকাশে আমাদের দেশের নাম তোলার একটা ব্যাপার আছে না! এবার ফেরার পালা। আর্মস্ট্রং আর অল্ড্রিন ঈগলে চেপে রওয়ানা দিলেন কলম্বিয়ার দিকে। কলম্বিয়াতে পৌঁছতেই তাঁদের লেগে গেলো প্রায় ৫ ঘণ্টা! একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি। ওঁরা তো চাঁদে গেলো ৩ জন, কিন্তু চাঁদে নামতে পেরেছিলো মাত্র ২ জন। আরেকজন, মানে কলম্বিয়ার পাইলট মাইকেল কলিন্স তো চাঁদেই নামতে পারেননি। কী করে নামবেন বলেন? উনি যদি কলম্বিয়া ছেড়ে বের হন, তাহলে কলম্বিয়াকে সামলাবে কে? বেচারা কলিন্স! এতো কাছে এসেও চাঁদে নামতে পারলেন না। ওঁর কতো খারাপ লেগেছিলো একবার ভাবো তো দেখি। কিন্তু সকলের মঙ্গলের জন্য কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ে তো ছাড় দিতেই হবে, তাই না? এরপর শুরু হলো পৃথিবীতে ফিরে আসার অভিযান। ঠিক ২ দিন পর ২৪ জুলাই খুব ভোরবেলা প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়লো কলম্বিয়া। আর সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দলও ঝটপট তাঁদের উদ্ধারে অভিযানে নেমে পড়লো। আর ঠিক ঠিক নভোযাত্রীদের কলম্বিয়া থেকে বের করেও আনলো। আর তারপর? নভোযাত্রীদের নিয়ে শুরু হলো মাতামাতি। মাতামাতি হবে না? ওঁরা যে রীতিমতো চাঁদ জিতে এসেছেন! আরো জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নাকি? তাহলে বরং এক কাজ করো, সাইমন বারট্রাম এর ‘ম্যান অন দ্য মুন’ বইটি জোগাড় করে পড়ে ফেলো। আর চাঁদে যাওয়ার কিন্তু আরও অনেক গল্প আছে। একবার তো নভোচারীরা চাঁদে যেতে গিয়ে আরেকটু হলেই মরতে বসেছিলেন! কেমন করে? থাক, সেই কাহিনী না হয় আরেকদিন শোনাবো, কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

¤¤আসুন রসুনের ওষধি গুনাবলি জানি¤¤

১.উচ্চ রক্তচাপে রসুন খুবই উপকারী একথা গবেষণায় প্রমাণ করেছেন জার্মান চিকিৎসকগণ। ২.রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে রসুনের ভূমিকা কার্যকরী। ৩.বাতের ব্যাথায় বা কোন আঘাত প্রাপ্ত স্থানে সরিষার তেলে রসুন গরম করে ম্যাসেজ করলে ব্যাথা লাঘব হয়। ৪.দাঁতের ব্যাথায় রসুন ব্যবহারে ব্যাথা কমে যায়। ৫.সম্প্রতি গবেষণায় জানা গেছে রসুন একাধারে ভাইরাসরোধী, ছত্রাকরোধী এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী পেনিসিলিনের মতো জীবাণুনাশক। ৫.ইকোলাই এবং টাইফয়েড জীবাণুধ্বংস করার মতো ক্ষমতা রাখে রসুন। ৬.রসুন খেলে অন্ত্রের জীবাণু ধ্বংস হয়ে পেটের সমস্যা নিরাময় হয়।

Biography of Kazi Nazrul Islam

Kazi Nazrul Islam (1899-1976 ) was a Bengali poet, musician, and revolutionary who is widely regarded as the national poet of Bangladesh. He was born on May 25, 1899, in the village of Churulia in the Bardhaman district of West Bengal, India. Nazrul was the second of three sons of his parents Kazi Faqeer Ahmed and Zahida Khatun. He lost his father at an early age and was brought up by his mother and elder brother. Nazrul had a keen interest in music from an early age and learned to play the flute, the tabla, and the harmonium. He also showed an early talent for writing poetry and began writing at the age of ten. In 1917, Nazrul joined the British Indian Army and was sent to the Middle East during World War I. He was deeply affected by the poverty and inequality he witnessed there and became involved in revolutionary politics. He returned to India in 1920 and began writing poetry that reflected his revolutionary views. Nazrul's poetry and music became very popular, and he became

অল্প টাকায় করুন লাভ জনক ব্যবসা ৫ম পর্ব

আমদের দেশের সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব,  আর এই বেকারত্ব এর দিক দিয়ে এগিয়ে আছে শিক্ষিত সমাজ। যারা অশিক্ষিত  তারা বিভিন্ন ছোট খাটো কাজ করে ঠিকি দিন পার করছে, তাই বলা যায় শিক্ষিত লোকি বেশি বেকার। তাই আমি কিছু অল্প টাকায় সম্মান জনক ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করলাম। অপ্ল টাকায় ইচ্ছে করলেই অনেক ব্যবসা করা যায়। তাহলে বসে না থেকে চলেন ব্যবসা করি। মোবাইলের চার্জার: আপনি অল্প টাকায় শুরু করতে পারেন মোবাইলের চার্জার এর ব্যবসা। আপনার এলাকায় যে মোবাইলের দোকান গুলো আছেএ, তাদের সাথে আলাপ করে তাদেরকে মোবাইল এর চার্জার সাপ্লাই দিতে পারেন। তার পর আস্তে আস্তে আপনার ইউনিয়নের মার্কেট দরতে পারেন। তার পর ফুল জেলা দরতে পারেন, আশা করি আপনার চাকুরির চেয়ে বেশি টাকা কামাতে পারবেন। মনে করেন- একটি মোবাইলের চার্জার কিনলেন ৫৫ টাকায়। আর বিক্রি করলেন ৬৫ টাকায়। তাহলে লাভ হচ্ছে ১০ টাকা। প্রতি দোকানিকে দিলেন ২০ পিস করে চার্জার, তাহলে ২০ দোকানিকে মাসে কমপক্ষে দিলেন ৪০০ চার্জার, তাহলে লাভ৪০০ গুন ১০ সমান ৪০০০ টাকা। ইয়ার ফোন : মোবাইলের ইয়ার ফোন কিনতে পারেন, ৫০-৫৫ টাকায়, তা বিক্রি করলেন ৬৫-৭০ টাকায়। তাহলে