আকাশের দিকে তাকিয়ে মানুষ সবসময় ভেবেছে এই পৃথিবীর
বাইরে কি আছে। তাই চাঁদ, তারা আর মঙ্গলসহ সব গ্রহগুলো তো বটেই আকাশের বাইরে
মহাকাশের সবকিছু নিয়েই মানুষের কৌত‚হল ছিলো সেই আদ্যিকাল থেকেই। বিংশ
শতাব্দীতে এসে মানুষের মহাকাশ ভ্রমণের সেই স্বপ্ন আলোর মুখ দেখলো। আর আজ
কেমন দেখতে দেখতে চাঁদে মানুষের পদার্পণের ৪২ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে! আপনারা
তো নিশ্চয়ই মানুষের চাঁদ বিজয়ের কাহিনী শু
নতে
চান। আজকে তাহলে চলেন সেই কাহিনীই শুনে আসি। আমরা জানি সৌরজগতের সব গ্রহ
সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে আর চাঁদ আবার পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। এ কারণেই
চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। জ্যোৎস্না রাতে আকাশের দিকে তাকালেই তো আপনি চাঁদ
দেখতে পান। তখন তোমার যেমন চাঁদে যেতে ইচ্ছা করে, এখন থেকে ৫০ বছর আগের
মানুষেরও ইচ্ছা করেছিলো। তাই সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে ‘স্পুৎনিক ২’
মহাকাশযানের ভেতরে করে প্রথম পৃথিবীর বাইরে একটি কুকুর
পাঠিয়েছিল। ওর নাম ছিল ‘লাইকা’। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের দেশটিকে চিনেছো তো? আরে, এখনকার রাশিয়া। কেনো, মানচিত্রে দেখেননি? এশিয়া আর ইউরোপের উপরের দিকে, যাকে বলে উত্তর দিকে এক বি-শা-ল দেশ! এরপর ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালে সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগরিন এবং ভালেন্তিনা তেরেসকোভা প্রথম মানব ও প্রথম মানবী হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ ভ্রমণ করে আসলে মানুষের চাঁদে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। এরই মধ্যে লুনা-১, লুনা-২ ও লুনা-৩ নামের তিনটি সোভিয়েত নভোযান চাঁদের অন্ধকার অংশের ছবিও তুলতে সক্ষম হয়। ১৯৫০’র শেষ দিকে আমেরিকা তাদের নিজেদের একটি মহাকাশ সংস্থা চালু করে, যার নাম দেওয়া হয় ‘নাসা’। এর লক্ষই ছিলো মহাকাশে মানুষ পাঠানো। কিন্তু সোভিয়েতরা তাদের এক মাস আগেই মহাকাশে মানুষ পাঠিয়ে দিলো। আর যায় কোথায়! ১৯৬১ সালের মে মাসে তখনকার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ২০০০ সালের আগেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দেন। তারপর আমেরিকা পাইওনিয়ার ও রেঞ্জার সিরিজের অনেকগুলো নভোযান চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠায়।
যাদের মধ্যে রেঞ্জার ৭, ৮, ৯ নভোযানগুলো চাঁদের ছবিও পাঠিয়েছিলো। এরই মধ্যে সোভিয়েত লুনার ও আমেরিকার স্রাভেয়র সিরিজের মানববিহীন নভোযান চাঁদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এরপর আমেরিকা তার অ্যাপোলো ৭, ৮, ৯, ১০ এই চারটি মানুষবাহী নভোযান পাঠায়। এগুলোকে চাঁদে মানুষ পাঠানোর একরকম প্রস্তুতিও বলতে পারো। আর অ্যাপোলো ১০ তো চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণও করে আসলো। এরপর আসে অ্যাপোলো ১১-র সেই বিখ্যাত অভিযান। এই অ্যাপোলো ১১’র নভোচারীরাই কিন্তু চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখেছিল। এই অ্যাপোলো ১১ নভোযানের দুটি অংশ ছিল- মূলযান কলম্বিয়া ও চাঁদে নামার জন্য একটি বিশেষ যান ঈগল। আর এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ৩ নভোচারী। এঁরা হলেন- নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র। এই ৩ জনের ছোট্টো দলের দলপতি কে ছিলেন বলো তো? নীল আর্মস্ট্রং। মাইকেল কলিন্স ছিলেন কলম্বিয়ার পাইলট আর এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র পাইলট ছিলেন ঈগলের। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে অ্যাপোলো ১১ উড়াল দিলো চাঁদের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১২ মিনিট পরে এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পৃথিবীর চারপাশে ঘোরাঘুরি করে ঠিক ৩০ মিনিট পরে চাঁদের দিকে যাত্রা শুরু করলো। আর ৩ দিন যাত্রা করার পর ১৯ জুলাই অ্যাপোলো ১১ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করলো। তক্ষুণি কিন্তু ঈগল, মানে যে যানটি চাঁদে যাবে, চন্দ্রযান আরকি, সেটা নিয়ে তাঁরা রওয়ানা দিলেন না। আগে তো সবকিছু ঠিকঠাকমতো দেখে নেয়া চাই নাকি! রীতিমতো ৩০ বার কক্ষপথে আবর্তন করে তবেই
চন্দ্রযান ঈগল মূল নভোযান কলম্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে গেলো। আর ২০ জুলাই চাঁদের শান্তির সাগর নামের জায়গাটিতে অবতরণ করলো ঈগল। চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণ করলো কোনো মানুষ। চাঁদে এঁকে দিলো মানুষের পায়ের ছাপ। চাঁদে প্রথম পা রাখেন কে বলেন তো? কে আবার? নীল আর্মস্ট্রং! আর তারপরে নামেন ঈগলের পাইলট এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র। তারপর তাঁরা চাঁদে হাঁটা- চলা করলেন, ছবি উঠালেন, চাঁদের মাটি সংগ্রহ করলেন, আমেরিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সাথে টেলিফোনে কথাও বললেন। এমন সুযোগ আর ক’জনের ভাগ্যে জোটে বলেন। চাঁদের বাতাসে কিন্তু মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নেই। এমনকি ওখানকার
বায়ুমন্ডল আমাদের জন্য একদমই উপযোগী নয়। তাই তাদেরকে বিশেষ স্পেসস্যুট পরেই চাঁদে নামতে হয়েছিলো। কসমোনটরা, মানে মহাকাশচারীরা যে স্যুট পরে মহাকাশে যায়, চাঁদেও তারা সেই স্যুট পরেই নেমেছিলেন। দেখো না, ওদের ছবিতে ওদের গায়ে সাদা রঙের কী বেঢপ একটা পোশাক! আবার আপনাদের তো ক্ষিদে পেলেই খেতে পারো, ইচ্ছা করলেই দৌড়োতে পারো, চাইলেই বন্ধুদের সাথে খেলতেও পারো, মানে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। মহাকাশে কিন্তু এতো সহজে সবকিছু করতে পারবে না। কারণ সেখানে তোমার কোনো ওজন নেই! তুমি যখন হেঁটে চলো কিংবা দৌড়াও, তখন পৃথিবী তোমাকে আকর্ষণ করে। তাই তোমার পা মাটিতেই থাকে। কিন্তু মহাকাশে তোমাকে কেউ-ই আকর্ষণ করবে না। তাই তুমি বাতাসে ভেসে বেড়াবে! ভাবছো, খুব
বুঝি মজা, ইচ্ছে মতো ভেসে বেড়ানো যাবে। কিন্তু মুশকিল কি জানো, তোমাকে কেউ টানছে না মানে তোমার কোনো অবলম্বনও নেই
যাকে ধরে তুমি চলাফেরা করবে। ওখানে এতোটুকু আগাতেই যে কী কষ্ট করতে হয়!
আর তাই মহাকাশচারীদেরকে আলাদা করে মহাশূন্যে চলাফেরা
করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণই নিতে হয়। চাঁদের অবশ্য আকর্ষণ শক্তি আছে। তবে তা পৃথিবীর তুলনায় নেহায়েতই কম। পৃথিবীর মাত্র ৬ ভাগের ১ ভাগ। আর তাই সেখানে মানুষের ওজনও পৃথিবীর ওজনের চাইতে অনেক কম, ঐ ৬ ভাগের ১ ভাগ। আর তাই ওদেরকে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হয়েছিলো।
আর আগেই তো বলেছি, চাঁদের বাতাস মানুষের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। তাই সেখানে কোনো শব্দই শোনা যায় না। এই কারণে আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিনকে একে অপরের সাথে কথা বলতে হয়েছিল রেডিওর মাধ্যমে। তারচেয়েও মজার কথা কি জানেন? তাদের চাঁদে অভিযানের দৃশ্য কিন্তু সারা পৃথিবীতে সরাসরি সম্প্রচারিতও হয়েছিল। সেই ভিডিও ক্লিপসগুলো এখনো আছে। আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিন প্রায় ২১ ঘন্টা চাঁদে ঘুরেছিলেন। তবে তারা সেখানে গিয়ে কেবল খেয়াল- খুশিমতো শুধু ঘোরাঘুরিই করেননি, বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করেছিলেন। আর সবশেষে আমেরিকার জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন চাঁদের বুকে। তবেই দেখো, আমাদের দেশের কেউ যদি যেতো, তবে চাঁদের বুকে আমাদের একটা লাল-সবুজ পতাকাও কী সুন্দর করে পতপত করে উড়তো! তোমাদের মধ্যে কেউ না কেউ কিন্তু অবশ্যই মহাকাশে যাবে। মহাকাশে আমাদের দেশের নাম তোলার একটা ব্যাপার আছে না! এবার ফেরার পালা। আর্মস্ট্রং আর অল্ড্রিন ঈগলে চেপে রওয়ানা দিলেন কলম্বিয়ার দিকে। কলম্বিয়াতে পৌঁছতেই তাঁদের লেগে গেলো প্রায় ৫ ঘণ্টা! একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি। ওঁরা তো চাঁদে গেলো ৩ জন, কিন্তু চাঁদে নামতে পেরেছিলো মাত্র ২ জন। আরেকজন, মানে কলম্বিয়ার পাইলট মাইকেল কলিন্স তো চাঁদেই নামতে পারেননি। কী করে নামবেন বলেন? উনি যদি কলম্বিয়া ছেড়ে বের হন, তাহলে কলম্বিয়াকে সামলাবে কে? বেচারা কলিন্স! এতো কাছে এসেও চাঁদে নামতে পারলেন না। ওঁর কতো খারাপ লেগেছিলো একবার ভাবো তো দেখি। কিন্তু সকলের মঙ্গলের জন্য কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ে তো ছাড় দিতেই হবে, তাই না? এরপর শুরু হলো পৃথিবীতে ফিরে আসার অভিযান। ঠিক ২ দিন পর ২৪ জুলাই খুব ভোরবেলা প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়লো কলম্বিয়া। আর সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দলও ঝটপট তাঁদের উদ্ধারে অভিযানে নেমে পড়লো। আর ঠিক ঠিক নভোযাত্রীদের কলম্বিয়া থেকে বের করেও আনলো। আর তারপর? নভোযাত্রীদের নিয়ে শুরু হলো মাতামাতি। মাতামাতি হবে না? ওঁরা যে রীতিমতো চাঁদ জিতে এসেছেন! আরো জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নাকি? তাহলে বরং এক কাজ করো, সাইমন বারট্রাম এর ‘ম্যান অন দ্য মুন’ বইটি জোগাড় করে পড়ে ফেলো। আর চাঁদে যাওয়ার কিন্তু আরও অনেক গল্প আছে। একবার তো নভোচারীরা চাঁদে যেতে গিয়ে আরেকটু হলেই মরতে বসেছিলেন! কেমন করে? থাক, সেই কাহিনী না হয় আরেকদিন শোনাবো, কেমন?
পাঠিয়েছিল। ওর নাম ছিল ‘লাইকা’। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের দেশটিকে চিনেছো তো? আরে, এখনকার রাশিয়া। কেনো, মানচিত্রে দেখেননি? এশিয়া আর ইউরোপের উপরের দিকে, যাকে বলে উত্তর দিকে এক বি-শা-ল দেশ! এরপর ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালে সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগরিন এবং ভালেন্তিনা তেরেসকোভা প্রথম মানব ও প্রথম মানবী হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ ভ্রমণ করে আসলে মানুষের চাঁদে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। এরই মধ্যে লুনা-১, লুনা-২ ও লুনা-৩ নামের তিনটি সোভিয়েত নভোযান চাঁদের অন্ধকার অংশের ছবিও তুলতে সক্ষম হয়। ১৯৫০’র শেষ দিকে আমেরিকা তাদের নিজেদের একটি মহাকাশ সংস্থা চালু করে, যার নাম দেওয়া হয় ‘নাসা’। এর লক্ষই ছিলো মহাকাশে মানুষ পাঠানো। কিন্তু সোভিয়েতরা তাদের এক মাস আগেই মহাকাশে মানুষ পাঠিয়ে দিলো। আর যায় কোথায়! ১৯৬১ সালের মে মাসে তখনকার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ২০০০ সালের আগেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দেন। তারপর আমেরিকা পাইওনিয়ার ও রেঞ্জার সিরিজের অনেকগুলো নভোযান চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠায়।
যাদের মধ্যে রেঞ্জার ৭, ৮, ৯ নভোযানগুলো চাঁদের ছবিও পাঠিয়েছিলো। এরই মধ্যে সোভিয়েত লুনার ও আমেরিকার স্রাভেয়র সিরিজের মানববিহীন নভোযান চাঁদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এরপর আমেরিকা তার অ্যাপোলো ৭, ৮, ৯, ১০ এই চারটি মানুষবাহী নভোযান পাঠায়। এগুলোকে চাঁদে মানুষ পাঠানোর একরকম প্রস্তুতিও বলতে পারো। আর অ্যাপোলো ১০ তো চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণও করে আসলো। এরপর আসে অ্যাপোলো ১১-র সেই বিখ্যাত অভিযান। এই অ্যাপোলো ১১’র নভোচারীরাই কিন্তু চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখেছিল। এই অ্যাপোলো ১১ নভোযানের দুটি অংশ ছিল- মূলযান কলম্বিয়া ও চাঁদে নামার জন্য একটি বিশেষ যান ঈগল। আর এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ৩ নভোচারী। এঁরা হলেন- নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র। এই ৩ জনের ছোট্টো দলের দলপতি কে ছিলেন বলো তো? নীল আর্মস্ট্রং। মাইকেল কলিন্স ছিলেন কলম্বিয়ার পাইলট আর এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র পাইলট ছিলেন ঈগলের। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে অ্যাপোলো ১১ উড়াল দিলো চাঁদের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১২ মিনিট পরে এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পৃথিবীর চারপাশে ঘোরাঘুরি করে ঠিক ৩০ মিনিট পরে চাঁদের দিকে যাত্রা শুরু করলো। আর ৩ দিন যাত্রা করার পর ১৯ জুলাই অ্যাপোলো ১১ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করলো। তক্ষুণি কিন্তু ঈগল, মানে যে যানটি চাঁদে যাবে, চন্দ্রযান আরকি, সেটা নিয়ে তাঁরা রওয়ানা দিলেন না। আগে তো সবকিছু ঠিকঠাকমতো দেখে নেয়া চাই নাকি! রীতিমতো ৩০ বার কক্ষপথে আবর্তন করে তবেই
চন্দ্রযান ঈগল মূল নভোযান কলম্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে গেলো। আর ২০ জুলাই চাঁদের শান্তির সাগর নামের জায়গাটিতে অবতরণ করলো ঈগল। চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণ করলো কোনো মানুষ। চাঁদে এঁকে দিলো মানুষের পায়ের ছাপ। চাঁদে প্রথম পা রাখেন কে বলেন তো? কে আবার? নীল আর্মস্ট্রং! আর তারপরে নামেন ঈগলের পাইলট এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র। তারপর তাঁরা চাঁদে হাঁটা- চলা করলেন, ছবি উঠালেন, চাঁদের মাটি সংগ্রহ করলেন, আমেরিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সাথে টেলিফোনে কথাও বললেন। এমন সুযোগ আর ক’জনের ভাগ্যে জোটে বলেন। চাঁদের বাতাসে কিন্তু মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নেই। এমনকি ওখানকার
বায়ুমন্ডল আমাদের জন্য একদমই উপযোগী নয়। তাই তাদেরকে বিশেষ স্পেসস্যুট পরেই চাঁদে নামতে হয়েছিলো। কসমোনটরা, মানে মহাকাশচারীরা যে স্যুট পরে মহাকাশে যায়, চাঁদেও তারা সেই স্যুট পরেই নেমেছিলেন। দেখো না, ওদের ছবিতে ওদের গায়ে সাদা রঙের কী বেঢপ একটা পোশাক! আবার আপনাদের তো ক্ষিদে পেলেই খেতে পারো, ইচ্ছা করলেই দৌড়োতে পারো, চাইলেই বন্ধুদের সাথে খেলতেও পারো, মানে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। মহাকাশে কিন্তু এতো সহজে সবকিছু করতে পারবে না। কারণ সেখানে তোমার কোনো ওজন নেই! তুমি যখন হেঁটে চলো কিংবা দৌড়াও, তখন পৃথিবী তোমাকে আকর্ষণ করে। তাই তোমার পা মাটিতেই থাকে। কিন্তু মহাকাশে তোমাকে কেউ-ই আকর্ষণ করবে না। তাই তুমি বাতাসে ভেসে বেড়াবে! ভাবছো, খুব
বুঝি মজা, ইচ্ছে মতো ভেসে বেড়ানো যাবে। কিন্তু মুশকিল কি জানো, তোমাকে কেউ টানছে না মানে তোমার কোনো অবলম্বনও নেই
যাকে ধরে তুমি চলাফেরা করবে। ওখানে এতোটুকু আগাতেই যে কী কষ্ট করতে হয়!
আর তাই মহাকাশচারীদেরকে আলাদা করে মহাশূন্যে চলাফেরা
করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণই নিতে হয়। চাঁদের অবশ্য আকর্ষণ শক্তি আছে। তবে তা পৃথিবীর তুলনায় নেহায়েতই কম। পৃথিবীর মাত্র ৬ ভাগের ১ ভাগ। আর তাই সেখানে মানুষের ওজনও পৃথিবীর ওজনের চাইতে অনেক কম, ঐ ৬ ভাগের ১ ভাগ। আর তাই ওদেরকে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হয়েছিলো।
আর আগেই তো বলেছি, চাঁদের বাতাস মানুষের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। তাই সেখানে কোনো শব্দই শোনা যায় না। এই কারণে আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিনকে একে অপরের সাথে কথা বলতে হয়েছিল রেডিওর মাধ্যমে। তারচেয়েও মজার কথা কি জানেন? তাদের চাঁদে অভিযানের দৃশ্য কিন্তু সারা পৃথিবীতে সরাসরি সম্প্রচারিতও হয়েছিল। সেই ভিডিও ক্লিপসগুলো এখনো আছে। আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিন প্রায় ২১ ঘন্টা চাঁদে ঘুরেছিলেন। তবে তারা সেখানে গিয়ে কেবল খেয়াল- খুশিমতো শুধু ঘোরাঘুরিই করেননি, বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করেছিলেন। আর সবশেষে আমেরিকার জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন চাঁদের বুকে। তবেই দেখো, আমাদের দেশের কেউ যদি যেতো, তবে চাঁদের বুকে আমাদের একটা লাল-সবুজ পতাকাও কী সুন্দর করে পতপত করে উড়তো! তোমাদের মধ্যে কেউ না কেউ কিন্তু অবশ্যই মহাকাশে যাবে। মহাকাশে আমাদের দেশের নাম তোলার একটা ব্যাপার আছে না! এবার ফেরার পালা। আর্মস্ট্রং আর অল্ড্রিন ঈগলে চেপে রওয়ানা দিলেন কলম্বিয়ার দিকে। কলম্বিয়াতে পৌঁছতেই তাঁদের লেগে গেলো প্রায় ৫ ঘণ্টা! একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি। ওঁরা তো চাঁদে গেলো ৩ জন, কিন্তু চাঁদে নামতে পেরেছিলো মাত্র ২ জন। আরেকজন, মানে কলম্বিয়ার পাইলট মাইকেল কলিন্স তো চাঁদেই নামতে পারেননি। কী করে নামবেন বলেন? উনি যদি কলম্বিয়া ছেড়ে বের হন, তাহলে কলম্বিয়াকে সামলাবে কে? বেচারা কলিন্স! এতো কাছে এসেও চাঁদে নামতে পারলেন না। ওঁর কতো খারাপ লেগেছিলো একবার ভাবো তো দেখি। কিন্তু সকলের মঙ্গলের জন্য কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ে তো ছাড় দিতেই হবে, তাই না? এরপর শুরু হলো পৃথিবীতে ফিরে আসার অভিযান। ঠিক ২ দিন পর ২৪ জুলাই খুব ভোরবেলা প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়লো কলম্বিয়া। আর সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকারী দলও ঝটপট তাঁদের উদ্ধারে অভিযানে নেমে পড়লো। আর ঠিক ঠিক নভোযাত্রীদের কলম্বিয়া থেকে বের করেও আনলো। আর তারপর? নভোযাত্রীদের নিয়ে শুরু হলো মাতামাতি। মাতামাতি হবে না? ওঁরা যে রীতিমতো চাঁদ জিতে এসেছেন! আরো জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নাকি? তাহলে বরং এক কাজ করো, সাইমন বারট্রাম এর ‘ম্যান অন দ্য মুন’ বইটি জোগাড় করে পড়ে ফেলো। আর চাঁদে যাওয়ার কিন্তু আরও অনেক গল্প আছে। একবার তো নভোচারীরা চাঁদে যেতে গিয়ে আরেকটু হলেই মরতে বসেছিলেন! কেমন করে? থাক, সেই কাহিনী না হয় আরেকদিন শোনাবো, কেমন?
Comments
Post a Comment