বাংলায় বহুমুত্র রোগ বললে যেটি খুব
সহজেই বোঝা যায়
ইংরেজী ডায়াবেটিস (Diabetes)
দিয়ে কিন্ত ঠিক তা বোঝায়না।
ডায়াবেটিস রোগটি আবার দুই প্রকার
- ডায়াবেটিস মেলাইটাস ( Mellitus)
এবং ডায়াবেটিস ইন্সিপিডাস
(Insipidus) । দুটি রোগেই যদিও বহুমুত্র
হতে পারে ডায়াবেটি্স ইনসিপিডাস
হলে কিন্ত রক্তে সুগার
বাড়ে না একটুও। মস্তিস্ক নিঃসৃত
হরমোনের
অভাবে অথবা কিডনি সমস্যার
কারনে এমনটি হতে পারে।
যাই হোক এই অধ্যায়ের সমস্ত
আলোচনা কিত্ন আমরা ডায়াবেটিস
মেলাইটাস নিয়েই করবো।
ডায়াবেটিস মেলাইটাসও কিন্ত
আবার দুই প্রকার - টাইপ ওয়ান এবং টাইপ
টু। খুব
সহজে বুঝতে গেলে যে ডায়াবেটিস
শিশুকাল বা বাল্যকাল থেকেই শুরু হয়
তা হলো টাইপ ওয়ান আর যেটা ৪০
বছরের কাছা কাছি শুরু হয় সেটা টাইপ
টু। যাই হোক রোগের কারন ভিন্ন
এবং চিকিৎসায় কিছুটা পার্থক্য
থাকলেও এই দুই ধরনের রোগের কিন্তু
অনেক অনেক মিল আছে।
ডায়াবেটিস হলে যে রক্তে সুগার এর
মাত্রা বেড়ে যায় এটা বোধহয় সবারই
জানা যদিও রক্তের সুগার এর মধ্যে শুধু
গ্লুকোজ ( Glucose) এর মাত্রাই এ
রোগে বেশী পাওয়া যায়। গ্লুকোজ
হলো আমাদের দেহের প্রায় সকল
কোষের শক্তির উৎস। হিসাব
অনুযায়ী ডায়াবেটিস হলে কিন্ত
আমাদের শরীরের
কোষগুলো আরো সতেজ আর
শক্তিশালী হয়ে উঠার কথা,
তাহলে এমনটি না হয়ে উল্টোটি হয়
কেনো?
আমাদের রক্তে যে গ্লুকোজ
থাকে তা আমাদের দেহের খুব কম
কোষই সরাসরি ব্যবহার করতে পারে,
গ্লুকোজকে কোষে ঢোকানোর জন্য
রয়েছে একটি হরমোন আর তার নাম
হলো ইনসুলিন (Insulin) যেটি আমাদের
অগ্নাশয় (Pancrease) একক ভাবে প্রস্তত
করে থাকে। আর এই অগ্নাশয় যখন যথেষ্ট
ইন্সুলিন উৎপাদন
করতে পারেনা দেহকোষে তখন
গ্লুকোজ
ঢুকতে পারেনা ফলে রক্তে গ্লুকোজ এর
মাত্রা যায় বেড়ে। একসময় কিডনি এই
বাড়তি গ্লুকোজ প্রসাবের সাথে বের
করে দিতে বাধ্য হয়,ফলে প্রসাব হয় ঘন ঘন
আর তাতে থাকে সুগার। এবার নিশ্চয়ই
বোঝা যাচ্ছে ডায়াবেটিস
হলে কেনো রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়
আর কেনই বা ইনসুলিনের
অভাবে ডায়াবেটিস হয়।
কোষে গ্লুকোজ ঢুকতে না পারায় কোষ
শক্তির যোগান পায়না, এজন্য
ডায়াবেটিস এর রোগী খুব সহজেই
ক্লান্তি আর দূর্বলতা অনুভব করে। যথেষ্ট
খাওয়া সত্ত্বেও ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে, ওজন
কমে যায়, বার বার প্রসাব হবার
কারনে পানি পিপাসাও
লাগে অনেক। এছাড়াও ক্ষত
শুকাতে দেরী হওয়া, খোশ-পাচড়া,
ফোড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেয়া,
চোখে কম দেখা ইভ্যাদি নানা উপসর্গ
গুলো সবই ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ।
অগ্নাশয়ের ইনসুলিন
উৎপাদনকারী কোষগুলো খুবই কম
থাকলে বা না থাকলে টাইপ ওয়ান
ডায়াবেটিস হয়। ফলে এই রোগের
চিকিৎসা একটিই, রোগীকে প্রয়োজন
অনুযায়ী ইনসুলিন দেয়া। টাইপ টু
ডায়াবেটিস হলে অগ্নাশয় প্রয়োজনের
তুলনায় যথেষ্ট উতপাদন
করতে না পারলেও কিছু ইনসুলিন ঠিকই
উৎপাদন করতে পারে। তাই টাইপ টু
ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা কিন্ত
কিছুটা ভিন্ন।
টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু দুটি রোগের
কারণই মুলত বংশগত, তারপরও কিছু কিছু
কারনে টাইপ টু ডায়াবেটিস এর
প্রকোপ একটু বেশী দেখা যায়। এর
মধ্যে আছে শারীরিক পরিশ্রম না করা
(Sedentary lifestyle) , অতিরিক্ত ওজন (Over
weight) বা মেদবহুল (Obese) শরীর, ধুমপান
করা, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ,
রক্তে বেশী চর্বি বা কোলেস্টেরল
(Cholesterol)থাকা, চল্লিশের উপড় বয়স
হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস
রোগটি কখনো পুরোপুরি ভালো হয়ে
যাবেনা তবে ঠিকমতো নিয়মকানুন ও
নির্দেশ মেনে চললে এটা সম্পুর্ন
নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। খাদ্যাভ্যাস
নিয়ন্ত্রন করা, নিয়মিত কায়িক পরিশম
বা ব্যায়াম করা, প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন
এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান ও শৃংখলা বোধ এই
চারটি জিনিষের সমন্ময়
ঘটালে ডায়াবেটিস রোগ
পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।
১। খাদ্যাভ্যাস- ডায়াবেটিস
বিশেষজ্ঞের নির্দেশ
মতো তৈরী করা খাদ্যতালিকা
অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। সহজ কথায়
চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার
খওয়া যাবেনা, শর্করা জাতীয় খাবার
খেতে হবে পরিমিত,ঘি-মাখন-চর্বি-
ডালডা জাতীয় খাবার পরিহার
করতে হবে যদিও তেল খেতে অত
বাধা নেই। আশযুক্ত খাবার, শাক-সব্জি,
টক ফল
ইত্যাদি বেশী পরিমানে দিয়ে খাদ্য
তালিকা তৈরী করলে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রুন করা সহজ হবে।
একবারে বেশী না খেয়ে অল্প অল্প
করে অনেক বারে তালিকার
খাদ্যটি খাওয়া উচিত সেই সাথে ওজন
কমানোর চিন্তাটাও মাথায়
রাখতে হবে।
২। হাটলে দুই পাশের হাতই নড়াচড়া
(swing) করে এভাবে নিয়মিত নুন্যতম ৪৫
মিনিট হাটতে হবে। হঠাৎ
করে একসাথে বেশী পরিশ্রম
করে ফেলা ঠিক হবেনা।
৩। নিয়ম মাফিক ডায়াবেটিস
বিশেষজ্ঞের লিখে দেয়া অসুধ
বা ইনসুলিন ব্যবহারে বিশেষ সতর্ক
থাকতে হবে, কোনোভাবেই এর
অন্যথা করা ঠিক হবেনা।
৪। শৃংখলাবোধ ডায়াবেটিস রোগীর
জীবনকাঠি তাই
একে আকড়ে ধরে রাখা চাই।
ডায়াবেটিস রোগ সম্বন্ধে জানার
ব্যবস্থা চারপাশে অনেক, তাই রোগের
কি অবস্থায় কি করতে হয়
তা জেনে নিতে হবে এবং সে
অনুযায়ী তরিত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
Comments
Post a Comment