প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষেরই নাকের
হাড় কিছু না কিছু বাঁকা থাকে।
নাকের হাড় বাঁকা হওয়ার এই
সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের
ভাষায় বলা
হয় ডিএনএস বা ডেভিয়েটেড ন্যাজাল
সেপ্টাম।
নাক বন্ধের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই।
এই নাক বন্ধের অনেক কারণ রয়েছে।
যেসব কারণে সাধারণত নাক বন্ধ
হতে দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে নাকের
হাড় বাঁকা উল্লেখযোগ্য।
নাকের হাড়
বাঁকার কারণে নাক বন্ধ
হলে সেক্ষেত্রে ওষুধের চিকিৎসায়
সমস্যা দূর করা যায় না। প্রায় শতকরা ৮০
ভাগ মানুষেরই নাকের হাড় কিছু
না কিছু বাঁকা থাকে। তবে সবার
তা নিয়ে সমস্যা হয় না। কেউ কেউ এ
নিয়ে সমস্যায় পড়েন। নাকের হাড়
বাঁকা হওয়ার এই
সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের
ভাষায় বলা হয় ডিএনএস
বা ডেভিয়েটেড ন্যাজাল সেপ্টাম।
অর্থাৎ নাকের
মধ্যবর্তী দেয়ালটি কোনো একদিকে হেলে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়া।
নাকের মধ্যবর্তী এই দেয়াল
নাককে দুটি গহ্বরে ভাগ করে রাখে।
নাকের
মধ্যবর্তী দেয়ালটি বাঁকা হওয়ার
কারণে সৃষ্ট সমস্যা ছোট-বড় যে কারোর
হতে পারে।
নাকের মধ্যবর্তী দেয়ালটি কেন
বাঁকা হয়?
নাকের মধ্যবর্তী এই
দেয়ালটি গড়ে ওঠে হাড়
বা অস্থি এবং তরুনাস্থির সমন্বয়ে।
কাজেই এই অস্থি এবং তরুনাস্থির
যে কোনোটি কিংবা উভয়
অংশটি বাঁকা হতে পারে। গবেষকদের
মতে, জন্মগত কিছু বিষয়, জন্মকালীন
আঘাত কিংবা জন্মপরবর্তী আঘাতই
নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা হওয়ার
অন্যতম কারণ। বেড়ে ওঠার
সঙ্গে সঙ্গে নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল
বাঁকা হওয়ার বিষয়টি সাধারণত ১৬ বছর
বয়সে স্থিতিশীল অবস্থায় পেঁৗছায়
এবং তারপর সৃষ্ট
প্রতিবন্ধকতা অনুযায়ী তা উপসর্গ
নিয়ে আবিভূর্ত হতে থাকে।
তবে নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল খুব
বেশি বাঁকা থাকলে সেক্ষেত্রে কম
বয়সেই অর্থাৎ কিশোর বয়সেই সমস্যার
কারণে সৃষ্ট উপসর্গগুলো দেখা দিতে শুরু
করে।
নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা হওয়ার
কারণে কি কি উপসর্গ দেখা দেয়?
নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা থাকার
বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
বাইরে থেকে বোঝা যায় না। নাক
পর্যবেক্ষণ করেই একজন নাক-কান-
গলা বিশেষজ্ঞ সহজেই
বিষয়টি চিহ্নিত করতে পারেন। এর
ফলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়
সেগুলো হলো_
সাধারণত যেদিকে নাকের
মধ্যবর্তী দেয়ালটি বেঁকে যায়
সেদিকের নাকের পথটি আংশিক বন্ধ
থাকে।
নাক বন্ধ থাকার কারণে নাক
দিয়ে সামান্য পানির
মতো ঝরতে পারে কিংবা নাকে সবসময়
সর্দি লেগে থাকতে পারে।
অনেকে নাক বন্ধ থাকার কারণে গলার
মধ্যে প্রায় সবসময় 'কিছু
একটা আটকে আছে' এই অনুভূতি ব্যক্ত
করে অস্বস্তি প্রকাশ করেন।
নাক বন্ধ থাকার কারণে কেউ কেউ
মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন।
নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা হওয়ার
কারণে নাকের দুই পাশের
সাইনাসে ইনফেকশন হতে পারে।
নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা হওয়ার
চিকিৎসা :
নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা হওয়ার
কারণে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে একমাত্র
চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন।
বয়সভেদে এই অপারেশনের নাম
সেপ্টোপ্লাস্টি কিংবা সাব মিউকাস
রিসেকশন বা এসএমআর। অপারেশনের
মাধ্যমে নাকের এই মধ্যবর্তী দেয়ালের
বাঁকা অস্থি ও
তরুনাস্থি ফেলে দেওয়ার পর
তা সোজা লম্বালম্বিভাবে অবস্থান
করে। ফলে নাকের দুই পাশের পথ প্রায়
সমান ও স্বাভাবিক হয়ে যায়। অনেকের
ধারণা, কিশোর বয়সে এই অপারেশন
করা যায় না। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়
হচ্ছে সমস্যা। অর্থাৎ নাকের
মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা হওয়ার
কারণে সৃষ্ট সমস্যা প্রকট
হয়ে থাকলে ৮-১০ বছর বয়সেও নাকের এই
অপারেশন করা যেতে পারে।
নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল বাঁকা হওয়ার
কারণে সৃষ্ট সমস্যা অপারেশনের পর
পুরোপুরিই চলে যায়। তবে ইতোমধ্যে এ
কারণে জটিলতা দেখা দিয়ে থাকলে তার
চিকিৎসাও করাতে হবে। যেমন
সাইনাসের ইনফেকশন
হয়ে থাকলে সাইনাস ওয়াশ
করাতে হবে।
পরিশেষে জেনে রাখা দরকার, এ
ধরনের সমস্যায় অপারেশন
না করলে পরবর্তীতে সাইনাসের
ইনফেকশন, মাথাব্যথা, কান বন্ধ হওয়া,
কানে পানির মতো তরল পদার্থ
জমে যাওয়া, কানে ইনফেকশন
হয়ে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান
দিয়ে পুঁজ পড়ার মতো সমস্যার
সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই
জেনে শুনে সেই পরিণতির
দিকে নিজেকে ঠেলে দেওয়া কি ঠিক
হবে?
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
নাক কান গলা বিভাগ,
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
Comments
Post a Comment